Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
টালী কারখানা
বিস্তারিত

সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে ইউরোপে যাচ্ছে মাটির টালি : আসছে ইউরো

 

সাতক্ষীরার কলারোয়ার মৃৎ শিল্পীরা এখন আর হাঁড়ি-কলস তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন না। তারা এখন মহাব্যস্ত সময় কাটান মাটির টালি বানানোর কাজে। কলারোয়ার উপকন্ঠে মুরারীকাটি ও শ্রীপতিপুরে মাটির কারিগররা গড়ে তুলেছে বাহারি টালির এক সাম্রাজ্য। সেখানকার মাটির টালি এক প্রকার রাজকীয় ভাবেই দেশের ভূখন্ড পেরিয়ে চলে যাচ্ছে সুদূর ইউরোপের ইতালিসহ কয়েকটি দেশে। এখানকার ডজন দুয়েক টালি কারখানা থেকে যাচ্ছে টালি আর আসছে ডলার ও ইউরো। মাটি কারিগরদের মেধা ও শ্রমে গড়ে ওঠা টালির আজ তাই ঠাঁই মিলেছে দেশের রফতানিযোগ্য পণ্য তালিকায়। আর এলাকাটিও পরিচিতি পেয়েছে “ইতালি নগর” নামে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, কলারোয়া থেকে ২০০৩ সালে প্রথম ইতালিতে টালি রফতানি করেন কাররা এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট প্রাইঃ লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারী রুহুল আমিন। বরিশালের এই মানুষটি ইতালিতে টালি রফতানির জন্য ভালো মাটির সন্ধান পান এই মুরারীকাটি এলাকাতেই। তিনিই সর্ব প্রথম রফতানিযোগ্য টালি ব্যবসার পথ দেখান। এই পথ ধরেই গত ৮ বছরে এ এলাকায় স্থাপিত হয়েছে ২০/২৫টির মত টালি কারখানা।

সরেজমিনে ইতালি নগর’ ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি টালি কারখানায় রফতানির জন্য মজুদ করা আছে বিপুল পরিমাণ বাহারি ডিজাইনের টালি। রয়েছে পোড়ানোর অপেক্ষায় রোদে শুকানো টালি। ভরা মৌসুমে শত শত পুরুষ-মহিলা শ্রমিক ব্যস্ত মাটির কাজে। এ সব মাটির কারিগররা কাজের দক্ষতারস্থর ভেদে ১শ’ দেড় শ’ থেকে আড়াই শ’ টাকা পর্যন্ত দৈনিক পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে। এ টাকায় তারা সংসারের প্রয়োজন মিটিয়েও কিছুটা সঞ্চয় করতে পারে। কলারোয়া ক্লে টাইলস, কটো ইনোভেটর, আরনো এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, জে.এস ট্রেডার্স, ডি.চন্দ্র পাল, নিকিতা ইনটারন্যাশনাল, কটো ইনোভেটর লিমিটেড এমন নামের ২০/২৫টি রফতানিযোগ্য প্রতিষ্ঠান এখানে ছড়িয়ে রয়েছে।

কারখানায় বসে কথা হয় ক্লে টাইলস’র সত্ত্বাধিকারী গোষ্ঠ গোপালের সাথে। তিনি বলেন, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দিন দিন আমাদের তৈরি করা টালির চাহিদা বাড়ছে। তবে টালি কারখানার সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় স্টক থেকে যাচ্ছে বেশি। গোষ্ঠ গোপাল আরও বলেন, প্রতি বছর এখান থেকে ৩/৪ শ’ কন্টেইনার টালি মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ইতালি যায়। কিন্তু এখানকার কারখানাগুলোতে এখন বছরে উৎপাদন হয় ৭শ’ থেকে ৮শ’ কন্টেইনার। প্রতি কন্টেইনার টালির উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় লাখ টাকা। আর ইউরোপের বাজারে কন্টেইনার প্রতি বিক্রি হয় বাংলাদেশ টাকায় দেড় লাখের ওপরে। তিনি জানান, ইতালিয়দের রুচি ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে আমরা টালির ডিজাইন করি। রেক্ট্যাঙ্গুলার, স্কয়ার, এ্যাঙ্গুলার, ব্রিকস শেপড এসব বিভিন্ন আকার ও ডিজাইনের টালি তৈরি ও রফতানি করে থাকি।

এক একটি কারখানাতে ২৫/৩০ জন কারিগর ও শ্রমিক কাজ করে। এসব প্রতিষ্ঠান শ্রমজীবি কারিগরদের করে তুলেছে স্বাবলম্বী। এখানকার প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দাবি, দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও এর দিকে তেমন নজর নেই কারো। যদি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়, তাহলে কারখানাগুলোর উৎপাদন মান আরো বিকশিত হবে বলে তারা মনে করেন। কলারোয়ার অঘোষিত এই ইতালি নগর যেন এক রাঙা ধুলোর জনপদ। প্রতিদিন শত শত শ্রমিকের শ্রমের বিনিময়ে এখানে তৈরি হয় এক একটি টালি। আমাদের এই কারিগরদের হাতে গড়া টালি চলে যায় সভ্যতা, তথ্য, প্রযুক্তি ও সম্পদে ভরা উন্নত দেশ ইতালিতে। সেখানে রয়েছে টালির শোরুম।

ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এদেশের মাটি দিয়ে গড়া এই টালি মেঝেতে, ছাদে, দেয়ালে টাইলস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রফতানি করা এই টালি ইতালিয়ানদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যামিক্যাল সংমিশ্রণে এর রূপ বদলে করা হয় টাইলস ও শোপিসে। যা সৌন্দর্য প্রিয় ইউরোপীয়দের বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনার কারুকার্যের জৌলুস বাড়ায়। আর আমাদের দেশের কারিগরদের উজ্জীবিত করে বেশি বেশি টালি উৎপাদন ও রফতানিতে।